ঐতিহ্যবাহী মার্বেল মেলা

প্রকাশঃ জানুয়ারি ১৬, ২০১৬ সময়ঃ ৫:০০ অপরাহ্ণ.. সর্বশেষ সম্পাদনাঃ ৫:০৫ অপরাহ্ণ

বরিশাল প্রতিনিধি

1ef5adb7বরিশালের আগৈলঝাড়ায় ২৩৫ বছরের প্রাচীণ ঐতিহ্যবাহী মার্বেল মেলা অনুষ্ঠিত হয়েছে।

গতকাল শুক্রবার আগৈলঝাড়াসহ পার্শ্ববর্তী উপজেলার হাজার হাজার নারী-পুরুষ মার্বেল খেলায় অংশগ্রহণ করে।

হিন্দু সম্প্রদায়ের অন্যতম পার্বণ পৌষ সংক্রান্তিতে বাৎসরিক পূজা উপলক্ষে প্রায় ২৩৫ বছর  ধরে এ গ্রামে মারবেল মেলা অনুষ্ঠিত হয়ে আসছে।

মারবেল খেলার মূল রহস্য সম্পর্কে স্থানীয় হরবিলাস মিস্ত্রী (৮২) সহ প্রবীণ ব্যক্তিরা জানান, আমাদের পূর্বপুরুষরা এ খেলার মাধ্যমে মেলার প্রচলন করেছিল, যা আজও অব্যাহত আছে। তাদের উত্তরসূরী হিসেবে আমরা সেই প্রাচীণ ঐতিহ্য ধরে রাখার প্রচেষ্টা চালাচ্ছি।

এ দিনটিকে ঘিরে রামানন্দের আঁক সহ আশেপাশের গ্রামে মহোৎসবের আমেজ বিরাজ করছে। স্থানীয় অধিবাসীরা তাদের মেয়ে-জামাইসহ অন্যান্য আত্মীয়-স্বজনদের এ মার্বেল মেলায় আমন্ত্রণ জানিয়ে আসছে।

একদিন আগে থেকেই মেলার জমজমাট আয়োজন শুরু হয়। তাই প্রতিটি বাড়ি আত্মীয়স্বজন ও দর্শনার্থীদের ভিড়ে লোকে লোকারণ্য হয়ে পরে। বাড়িতে বাড়িতে চিড়া, মুড়ি, খেঁজুর গুড়ের পিঠা খাওয়ার ধুম পরে যায়। এবছরও মেলার প্রধান আকর্ষণ হিসেবে বিভিন্ন বয়সের নারী-পুরুষদের মধ্যে মার্বেল খেলার প্রতিযোগিতা হয়েছে।

সরেজমিনে দেখা গেছে, প্রায় ৫ কি.মি এলাকা জুড়ে মার্বেল খেলা চলছে। রাস্তার ওপর, বাড়ির আঙিনা, অনাবাদী জমি, বাগানসহ সর্বত্রই মারবেল খেলার আসর বসেছে। এর সাথেই একটি বড় খোলা অনাবাদী জমিতে বসেছে বাঁশ-বেতের তৈরি শিল্প সামগ্রী, মনোহারী, খেলনা, মিষ্টি, ফল, চটপটি, ফুচকাসহ খাদ্য দ্রব্যের দোকান।

গোপালগঞ্জের কোটালীপাড়া থেকে আসা জয়দেব বিশ্বাস জানান, আমরা মার্বেল মেলার কথা শুনে এসেছি। ব্যতিক্রমধর্মী এই মেলা আমাদের খুব ভাল লেগেছে।

রামানন্দের আঁক গ্রামের জয়ন্ত বাগচীর ছেলে ৬ষ্ঠ শ্রেণীর ছাত্র দিগন্ত a4e92f3b-জানায়, সারাবছর টাকা জমিয়েছি মার্বেল খেলার জন্য।

কমিটিসূত্রে জানা গেছে, মেলায় মার্বেল খেলার জন্য অনেকে দূর-দূরান্ত থেকে এসেছেন। এজন্য পূর্ব থেকেই মেলার ব্যাপক নিরাপত্তার ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছিলো।

স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, রামানন্দের আঁক গ্রামে ২৩৫ বছর পূর্বে সোনাই চাঁদ নামে এক কন্যার মাত্র ৬ বছর বয়সে বিয়ে হয়। পরের বছর ৭ বছর বয়সে স্বামী মারা গেলে নি:সন্তান অবস্থায় শ্বশুরবাড়িতে একটি নিমগাছের নীচে শিবের আরাধনা ও পূজার্চনা শুরু করেন। ক্রমশই তাঁর অলৌকিকত্ব এলাকায় ছড়িয়ে পরে। তখন থেকেই ঐ স্থানে বাৎসরিক পূজা হয়ে আসছে।

মেলা কমিটির সভাপতি যতীশ চন্দ্র বাড়ৈ জানান, মা সোনাই চাঁদ আউলিয়ার জীবদ্দশায় আনুমানিক ১৭৮০ ইং সাল থেকে শুরু করে অদ্যাবধি প্রতিবছর পৌষ সংক্রান্তির দিনে নবান্নের মহোৎসবের মাধ্যমে মেলা অনুষ্ঠিত হয়ে আসছে। তাঁর মৃত্যুর পরে ঐ বাড়িটি সোনাই আউলিয়ার বাড়ি হিসেবে এলাকায় পরিচিতি লাভ করে। মা সোনাই চাঁদ আউলিয়ার মন্দিরটি আড়াই লক্ষাধিক টাকা ব্যয়ে নির্মাণ কাজ শেষ হয়েছে।

প্রতিবছর এই দিনটি উপলক্ষে বৈষ্ণব সেবা, নাম সংকীর্ত্তন, কবিগান শেষে সোয়ামণ (৫০ কেজি) চালের গুড়ার সাথে সোয়ামণ গুড়, ৫০ জোড়া নারকেল ও প্রয়োজনীয় অন্যান্য দ্রব্য সামগ্রী মিশিয়ে নবান্ন তৈরী করে মেলায় আগত দর্শণার্থীদের প্রসাদ হিসেবে বিতরণ করা হয়।

 

প্রতিক্ষণ/এডি/ এল জেড

আরো সংবাদঃ

মন্তব্য করুনঃ

পাঠকের মন্তব্য

20G